মেগা প্রজেক্ট কি | বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্ট সমূহ Composition

মেগা প্রজেক্ট কি | বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্ট সমূহ

মেগা প্রজেক্ট কি | বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্ট সমূহ

আসলে মেগা প্রজেক্ট কি? মেগা প্রজেক্ট বলতে কি বুঝায়? মেগা প্রজেক্ট কত প্রকার হতে পারে? আপনি যদি এই সকল প্রশ্নের উত্তর গুলো না জেনে থাকেন তাহলে এই টিউটোরিয়াল টি আপনার জন্য এই টিউটোরিয়ালে আপনি মেগাপ্রজেক্ট সম্পর্কে সকল তথ্য এবং বাংলাদেশের কয়টি মেগাপ্রজেক্ট আছে এবং সেগুলো কি কি এই সকল বিষয়াবলী জানতে পারবেন।  
মেগা প্রজেক্ট কি | বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্ট সমূহ
মেগা প্রজেক্ট কি | বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্ট সমূহ

মেগাপ্রজেক্ট কি

মেগা প্রজেক্ট বা মেগাপ্রকল্প হচ্ছে একটি দেশের অত্যন্ত বড় মাপের বিনিয়োগ প্রকল্প। অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুক অফ মেগাপ্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অনুসারে যেই প্রজেক্ট গুলো তৈরি বা নির্মান করতে কয়েক বছর সময় এবং ১ বিলিয়ন বা তার বেশি টাকা খরচ হয়, সেই প্রজেক্টকে মেগা প্রজেক্ট বলে। 


বিকাশ ও নির্মাণে কয়েক বছর সময় এবং একটি মেগাপ্রজেক্ট একাধিক সরকারী এবং বেসরকারী স্টেক হোল্ডারদের জড়িত করে, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে৷।


অনেক ক্ষেত্রে মেগাপ্রজেক্ট সংজ্ঞায়িত করার জন্য আপেক্ষিক পদ্ধতির প্রয়োজন হয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেন্ট ফ্লাইভব্জার্গ বলেছেন বৈশ্বিক জিডিপির ৭ শতাংশ আসে বিশ্বের সকল মেগা প্রজেক্ট থেকে।

মেগা প্রজেক্ট কত প্রকার

মেগা প্রজেক্ট অনেক ধরনের হয়ে থাকে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পাওয়ার প্লান্ট, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সেতু, মহাসড়ক, টানেল, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন প্রকল্প, মহাকাশ প্রকল্প, অস্ত্র ব্যবস্থা,  তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি। 


মেগাপ্রজেক্টের মধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং অবকাঠামোতে বড় আকারের উচ্চ-মূল্যের উদ্যোগগুলিও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যেমন মানব জিনোমের সিকোয়েন্সিং, জেনেটিক্স এবং বায়োটেকনোলজি

বাংলাদেশের ৫ টি মেগা প্রজেক্ট

বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন সেই ধারাবাহিকতায় বেশ কিছু মেগাপ্রজেক্ট করার উদ্যোগ নিয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এবং মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। 

এর মধ্যে ২০২২ সালের জুনে পদ্মাসেতু এবং ডিসেম্বরে মেট্রোরেল এর উদ্বোধন হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের মধ্যে বাকি মেগাপ্রজেক্ট গুলো চালু হয়ে যাবে। নিচে বাংলাদেশের ৫ টি মেগাপ্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ

কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ বা বঙ্গবন্ধু টানেল হচ্ছে বাংলাদেশের নির্মানাধীন একটি মেগাপ্রজেক্ট। কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে পানির ১৫০ ফুট নিচে অবস্থিত নির্মাণাধীন সড়ক সুড়ঙ্গ। 


যার দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩.৪৩ কিলোমিটার। এই সুড়ঙ্গটি দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম এই সড়ক সুড়ঙ্গপথের নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। 

২০১৬ সালে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এর সাথে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিয়েছে আর বাকি টাকা বাংলাদেশের নিজস্ব। 

এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রকল্প নিয়েছেন চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।চট্টগ্রাম শহরের নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এই টানেল নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বাংলাদেশে যতগুলো মেগাপ্রজেক্ট আছে তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল মেগাপ্রজেক্ট হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। 


পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর নামক স্থানে নির্মিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মানব্যয় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এটি হতে যাচ্ছে ২.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যার  প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবে। 

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মান কাজে যুক্ত আছেন রাশিয়ার রোসাটোম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশন। পাবনার জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার অন্তর্গত পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।  প্রকল্পটি পদ্মা নদীর উপরে নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ও লালন শাহ সেতুর পাশেই নদীতীরে অবস্থিত।

মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে বাংলাদেশের একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। 


২০১৪ সালে এই প্রজেক্টের নির্মানব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের নির্মানব্যয় আরো ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে মোট নির্মানব্যয় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা।

মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে, ২০২৩ সালে চালু হওয়ার কথা ছিলো এখন এর নির্মান কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে। 

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬০০ মেগাওয়াটের মোট দুটি ইউনিট তৈরি হবে। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১২০০ মেগাওয়াট।

পদ্মাসেতু

পদ্মা সেতু বা পদ্মা বহুমুখী সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এই সেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে। 

পদ্মাসেতু বাংলাদেশের একমাত্র মেগাপ্রজেক্ট যাকে নিয়ে শত আলোচনা ও সমালোচনা। বাংলাদেশে আর কোনো প্রজেক্ট নিয় এত সমালোচনা হয়নি যা হয়েছে পদ্মামেতু নিয়ে, কিন্তু সব সমালোচনা কে পিছনে ফেলে ২০২২ মে মাসে শেষ তয় সেতুর কাজ এবং জুন মাসের ২৫ তারিখ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন এই সপ্নের পদ্মাসেতু ও পরের দিন থেকে এটি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। 

পদ্মা সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি সহ পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। 


বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। যা ৩৫ বছরে ১ শতাংশ সুদ হারে পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

মেট্রোরেল

ঢাকা মেট্রো যা আনুষ্ঠানিকভাবে মাস র‍্যাপিড ট্রানজিট বা সংক্ষেপে এমআরটি নামে পরিচিত। অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে প্রথমবারের মত ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। 

প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্বাচন করা হয় এমআরটি লাইন ৬ যা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ ২০১৬ সালে জুন মাসে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। যার নির্মানব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার কোটি টাকা। 


একটানা ৬ বছর কাজ করার পর ২০২২ সালে ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকায়  চালু হয় এমআরটি লাইন-৬-এর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ। এবং ২৯ ডিসেম্বর থেকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়।


আর্টিকেলের শেষকথাঃ মেগা প্রজেক্ট কি | বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্ট সমূহ

এই টিউটোরিয়ালে মেগা প্রজেক্ট কি? মেগাপ্রজেক্ট বলতে কি বুঝায়? মেগা প্রজেক্ট কত প্রকার? বাংলাদেশের সকল মেগাপ্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আপনি যদি পুরো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন আমি আশা করছি মেগাপ্রজেক্ট সম্পর্কে আর কোনো তথ্য আপনার অজানা নেই, ধন্যবাদ সাথেই থাকুন ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

Next Post Previous Post