বর্তমান প্রেক্ষিতে নারীর সামাজিক মর্যাদা বিশ্লেষণ কর
বর্তমান প্রেক্ষিতে নারীর সামাজিক মর্যাদা বিশ্লেষণ কর - আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বর্তমান প্রেক্ষিতে নারীর সামাজিক মর্যাদা বিশ্লেষণ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বর্তমান প্রেক্ষিতে নারীর সামাজিক মর্যাদা বিশ্লেষণ কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
বর্তমান প্রেক্ষিতে নারীর সামাজিক মর্যাদা বিশ্লেষণ কর |
বর্তমান প্রেক্ষিতে নারীর সামাজিক মর্যাদা বিশ্লেষণ কর
নারীর সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে যা জান লিখ।
নারীর সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অস্তিত্বের ফলে নারীরা সর্বদা পুরুষদের অধীনস্তই থাকতে হয়। সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্র পুরুষদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় বলে নারীদের সারাজীবন কাটে পুরুষদের গোলামিতে। নারীদের ইচ্ছা- অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ সবই পুরুষদের চাহিদা মোতাবেক হতে হয়। পুরুষরা ইচ্ছামত শাসন কর্তৃত্ব পরিচালনা করে। নারীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা তারা ভাবে না। ফলে নারীরা সামাজিক জীবের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
→ নারীর সামাজিক মর্যাদা : নারীরা আজ সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। নারীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে নারীরা পারিবারিক অধিকার, সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।, সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তারা প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নিম্নে নারীদের বর্তমান সমাজে সামাজিক মর্যাদা তুলে ধরা হলো-
১. পরিবারে নারীর অবস্থান : পরিবারের সমন্বয়েই সমাজ গঠিত হয়। সেই পরিবারেই নারীরা পদক্রমিকতার শিকার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা হওয়ায় নারীরা পরিবারের পদক্রমিকতার নিচের দিকে অবস্থান করে। কেননা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্বের উপর ভিত্তি করে।
পরিবার পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অর্থ উপার্জন সবই পুরুষ কর্তৃক হয়ে থাকে। এইসব কাজে নারীদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে । যেহেতু পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না, তাই তারা মর্যাদারও অধিকারী হয় না। আর এভাবেই নারীদের মর্যাদা হরণ করা হয় ।
২. নারীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : আমাদের সমাজব্যবস্থায় একজন স্বাধীন সামাজিক জীব হিসেবে নারীকে মূল্যায়ন করা হয় না। কোন ক্ষেত্রেই তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করা হয় না। সব সময়ই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা হয় ।
কোন কাজে নারীরা যোগ্য নয়, তারা দুর্বল, তাদের জন্য এ কাজ নয় প্রভৃতি সাধারণ ধারণা সব সময় করা হয়। আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি যেসব নেতিবাচক ধারণা করা হয় সেগুলো হলো-
(ক) নারীরা পুরুষদের তুলনায় শারীরিক শক্তি, মেধা, যোগ্যতার ক্ষেত্রে দুর্বল;
(খ) নারীদের কাজ হলো স্বামীর ঘর-সামলানো, সন্তান জন্ম দেয়া ও তাদের লালন পালন করা;
(গ) নারীদের ঘরেই মানায়, বাইরের পরিবেশের সাথে তারা সামঞ্জস্যশীল নয় ও
(ঘ) নারীরা মায়ের জাতি, তারা অন্যদের প্রতি নমনীয়, কোমল ও সদয় বলে কারো প্রতি কঠোর হতে পারে না। তাই তারা কোথাও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব প্রদান করতে পারে না।
৩. পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষা : আমাদের সমাজের মানুষগুলো সাংসারিক জীবনে এসে সব সময় পুত্রসন্তান কামনা করে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে-পুত্র সন্তান কাজে কর্মে সহযোগিতা করবে, তার অর্থের যোগান এবং বৃদ্ধ বয়সে শেষ অবলম্বন হিসেবে সকল ব্যয়- ভার বহন করবে।
আর তাদের ধারণা কন্যা সন্তানের কাছ থেকে এইসব কখনই পাওয়া সম্ভব নয়, তাই তারা কন্যা সন্তান কামনা করে না। এরপরও যদি কারো কন্যা সন্তান জন্ম নেয় তাহলে জন্মের পর থেকে শুরু হয় তার প্রতি বৈষম্য। আর কন্যার মায়ের কপালে নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন।
৪. লিঙ্গভিত্তিক শ্রম বিভাজন : আমাদের দেশে শ্রমের ক্ষেত্রেও লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন পরিলক্ষিত হয়। নারী-পুরুষের শ্রমের ধরন ও স্থান ভিন্ন । নারীরা শ্রম দিবে পরিবারে, সংসারে, তার জন্য পারিশ্রমিকও নেই, তাই নেই কোন সামাজিক মর্যাদা। কারণ যার অর্থ আছে, যে অর্থ উপার্জন করে সেই তো সমাজের চোখে মর্যাদার অধিকারী।
আর পুরুষরা যেহেতু সমাজের সকল গুরুত্বপূর্ণ ও উৎপাদনশীল কাজে শ্রম দেয়, তাই তারা যথেষ্ট পারিশ্রমিক পায় এবং সম্মানেরও অধিকারী হয়। তবে বর্তমানে ঘরের বাইরে যদিও অংশগ্রহণ বেড়েছে কিন্তু এক্ষেত্রে বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
৫. শারীরিক পার্থক্য : নারীরা জন্মগতভাবেই দুর্বল হয় আর পুরুষরা হয় সবল ও শক্তিশালী এই হচ্ছে আমাদের সমাজের মানুষের মূল ধারণা। শিশুকাল থেকেই তাই পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তানের মধ্যে পিতা মাতারা সব ক্ষেত্রেই পার্থক্য করতে থাকে।
ছেলের দৈহিক বিকাশ সাধন, সাহস বৃদ্ধির জন্য যদিও পিতা-মাতাগণ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন কিন্তু মেয়ের জন্য তার কিছুই করা হয় না। যার ফলে মেয়েরা দুর্বল ও ভীতুই থেকে যায়। নারীদের এই নেতিবাচক দিকের ফলে সমাজের ভাল কোন পর্যায়ে তারা পৌঁছতে পারে না।
৬. শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা : শিক্ষাক্ষেত্রেও নারীরা আজ বৈষম্যের শিকার। পিতা-মাতার যতসব মাথাব্যথা থাকে ছেলের শিক্ষা নিয়ে। পিতামাতার চিন্তা, সময় ও অর্থ সবই ব্যয় হয় ছেলের শিক্ষার পিছনে, কিন্তু মেয়েদের নিয়ে চিন্তা করার মতো সময় তাদের নেই এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ের মানসিকতাও তাদের নেই।
তাদের অভিমত হচ্ছে-মেয়ে কোন রকম ধর্মীয় গ্রন্থটা পড়তে পারলেই হলো আর প্রাথমিক শিক্ষাটা অর্জন করতে পারলেই হলো এরপর বিয়ে দিয়ে দিবে ।
৭. বৈবাহিক সম্পর্ক : সমাজের নারীরা বিবাহের ক্ষেত্রেও স্বীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে নারীদের পছন্দ-অপছন্দ, সম্মতি-অসম্মতির কোন মূল্য নেই। পিতৃ পরিবার যে সিদ্ধান্ত নিবে, যেখানে যার সাথে ইচ্ছা বিয়ে দিবে। এমনকি বর্তমানে নারীরা তাদের প্রাপ্য দেনমোহর হতেও বঞ্চিত।
বিবাহের পর শুরু হয়ে যায় নারীর জীবনের ওপর এক অধ্যায় যেখানে তার জন্য থাকে কঠোর পরিশ্রম, গঞ্জনা, কখনো কখনো অমানবিক আচরণ ও নির্যাতন। খুব কম নারীই দাম্পত্য জীবনে সুখী হয়। সুতরাং বলা যায় বৈবাহিক জীবনেও নারীরা মর্যাদা পায় না ।
৮. মাতৃত্ব : যে মা এত কষ্ট সহ্য করে সন্তান জন্ম দেয়, সে মাকেই সন্তানের বিপদগামিতার জন্য পিতার পক্ষ থেকে দায়ী করা হয় । সমাজে এই কথাটা খুব প্রচলিত যে, “ছেলে ভাল হলে বাবার, আর খারাপ হলে মায়ের” ।
অনেক সময় খুব কম বয়সে বিবাহ হওয়ার দরুণ বা ঘন ঘন সন্তান জন্ম দেয়ার দরুণ মাকে পুষ্টিহীনতায় ভুগতে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবনের জন্য তা ঝুঁকি হিসেবেও দাঁড়ায়।
অতঃপর সন্তান জন্মদানের পর থেকে শুরু হয়ে যায় তার পেছনে মায়ের দায়িত্ব পালন। তার লালন-পালন, প্রাথমিক শিক্ষা সবই মায়ের উপর বর্তায়। বাবা এক্ষেত্রে শুধু অর্থের আভাস দেয়।
উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, নারীরা আজ সমাজের প্রত্যেক স্তরে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে স্বীয় মর্যাদা থেকে বঞ্চিত । সমাজের ক্ষুদ্র ও প্রাথমিক সংগঠন পরিবারে নারীরা যেমন অবহেলিত, নির্যাতিত, তেমনি শিক্ষা ক্ষেত্রে, আর্থিক ক্ষেত্রে এবং সমাজের নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও বঞ্চিত।
নারীদের এই অবস্থার পেছনে পুরুষরাই দায়ী। তাই অবস্থার উত্তরণ করতে হলে পুরুষ সমাজকে নারীদের বুঝতে হবে, তাদের অধিকার প্রদান করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীর শিক্ষা সর্বত্রকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নই পারে নারীদের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করতে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বর্তমান প্রেক্ষিতে নারীর সামাজিক মর্যাদা বিশ্লেষণ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বর্তমান প্রেক্ষিতে নারীর সামাজিক মর্যাদা বিশ্লেষণ কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।