বাংলার উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব গুলি আলোচনা করো

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলার উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব গুলি আলোচনা করো  জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলার উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব গুলি আলোচনা করো  । 

বাংলার উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব গুলি আলোচনা করো
বাংলার উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব গুলি আলোচনা করো 

বাংলার উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব গুলি আলোচনা করো 

বাংলাদেশের সমাজকাঠামোর উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদাররা জমির মালিক হন। বাংলার কৃষকশ্রেণী ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়। দেশের সম্পদশালী গোষ্ঠীগুলো জমিদারে পরিণত হয়। জমিদারগণ জমি বিক্রয় করতে পারে। 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলার কৃষকশ্রেণি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরে। গোমস্তা ও নায়েবরা রাজস্ব আদায়ের জন্য যেকোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতো। সরকার ও চাষিদের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাহত হয়। কৃষকেরা ঋণে জর্জরিত হয়। 

গ্রামের মহাজন হতে কৃষকরা চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করতো। কৃষকেরা জমিদারের দাসে পরিণত হয়। জমিদার ও সরকার জমির স্থায়ী উন্নয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

→ বাংলাদেশের সমাজকাঠামোর উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হলো কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য জমিদারদের সাথে সম্পাদিত একটি চুক্তি সমতুল্য ব্যবস্থা। ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষিত হয় । নিম্নে বাংলাদেশের সমাজকাঠামোর উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব আলোচনা করা হলো :

১. কৃষি অর্থনীতি ধ্বংস : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলাদেশে কৃষি অর্থনীতি ধ্বংস হয়। কৃষকেরা জমির উপর কর্তৃত্ব হারায়। ফলে কৃষকেরা কৃষি উৎপাদনের আগ্রহ হারায়।

কৃষি উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়। বাংলার কৃষকদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম তারা পায়নি। কৃষিকাজে কৃষকের লোকসান দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে ।

২. অতিরিক্ত খানজা ধার্য : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদাররা জমির মালিক হন। তারা কৃষকদের উপর চড়া খাজনা আরোপ করেন। চড়া খাজনা দিয়ে জমি চাষাবাদ করা কৃষকের পক্ষে সম্ভব নয়। খাজনা ছাড়া ও জমিদাররা কৃষকের নিকট থেকে নানাভাবে অবৈধ কর আদায় করতো। এছাড়া জমিদারের কর্মচারীরা কৃষকদের নিকট থেকে সুদ ও ঘুষ নিত ।

৩. জমিদারি ধ্বংসপ্রাপ্ত : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারি ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কোনো কোনো জমিদার লাগামহীন খাজনা ধার্য করে। সূর্যাস্ত আইনের মাধ্যমে খাজনা আদায় করতো। 

ঐসব জমিদারি বেশিদিন টিকতে পারেনি। প্রজারা অতিরিক্ত খাজনা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে প্রজাদের উপর নেমে আসত নির্যাতন । প্রজাদের অসন্তুষ্টের কারণে জমিদারি প্রথা অল্প দিনেই ধ্বংস হয় ।

৪. শিল্পায়ন ব্যাহত : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে শিল্পায়ন ব্যাহত হয়। জমিদার ও সম্পদশালী তাদের অর্থসম্পদ স্থাবর সম্পত্তিতে ব্যয় করতে সক্ষম হয়। সম্পদশালীরা কেউ ঝুঁকি নিয়ে শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহী নয়। 

তাছাড়া বিদেশি শিল্পের প্রভাবে এদেশের ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প ধ্বংসের মুখে পড়ে। সম্পদশালীরা তাদের অর্থসম্পদ জমিতে বিনিয়োগ করে। এর ফলে শিল্প উৎপাদন অবহেলিত হয়। এদেশের শিল্প সম্পদ ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে ।

৫. নতুন জমিদারের উদ্ভব : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে নতুন জমিদারের উদ্ভব হয়। সম্পদশালী কিছু লোক জমিতে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তারা জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকে। 

এভাবে কিছু সম্পদশালী ব্যক্তি জমিদারে পরিণত হয়। এছাড়া সূর্যাস্ত আইনের মাধ্যমে বড় বড় জমিদারদের জমিদারিত্ব ধ্বংস হয়। বড় বড় জমিদার ধ্বংস হয় অন্যদিকে নতুন নতুন জমিদার শ্রেণি উদ্ভব হয় ।

৬. ভূমিহীন কৃষক : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সমাজে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। জমিদারদের নির্যাতিত অত্যাচার, খাজনা, নিপীড়ন ইত্যাদির ফলে কৃষকেরা হতে থাকে । জমি থেকে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পায় না । 

আবার উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে খাজনা টাকা দিতেই সব সম্পদ শেষ হয়ে যায়। ফলে কৃষকেরা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না। তাই কৃষকেরা কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে বেকারে পরিণত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমির মালিক জমিদার হওয়া কৃষক শ্রেণি ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়।

৭. সামাজিক বৈষম্য : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সমাজে বৈষম্য দেখা যায়। সমাজে ধনী, মধ্যবিত্ত ও ভূমিহীন কৃষক শ্রেণির উদ্ভব হয় । এ আইনের ফলে ধনীরা জমি ক্রয় করে জমির মালিক হন। দরিদ্র কৃষকেরা জমি ক্রয় করতে পারে নাই। 

তারা ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়। সমাজে উচ্চবিত্তের লোকেরা ভূমিহীন কৃষকদের শোষণ করতো। সমাজে স্তরবিন্যাসের উদ্ভব হয়, যা সমাজকে চির অশান্তিতে পরিণত করে। এর ফলে সমাজে ধনী, মাঝারি ও দরিদ্র কৃষকশ্রেণির উদ্ভব ঘটে ।

৮. জমিদারি বাণিজ্যিকীকরণ : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সমাজে জমিদারি বাণিজ্যে পরিণত হয়। জমি থেতে খাজনা আদায় লাভজনক হওয়ায় অনেকে জমির মালিক হতে চায়। বিত্তশালীরা অন্যের জমিদারি ক্রয় করে। 

সমাজে জমিদারি লেনদেন হতো। যখন এক জমিদার থেকে জমিদারি অন্য জমিদারের নিকট যেত, তখন ঐ জমিদার খাজনার হার বৃদ্ধি করতো । প্রজারা খাজনা দিতে না পারলে নির্যাতন করা হতো।

৯. পেশাজীবী শ্রেণির আধিপত্য : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সমাজে পেশাজীবী শ্রেণির আধিপত্য বেড়ে যায়। কৃষক ও জমিদারদের মধ্যে বিবাদের কারণে মামলা, মোকদ্দমা হয় যার ফলে সমাজে উকিল, মোক্তার ও আইনজীবী শ্রেণির উদ্ভব হয়। 

এই শ্রেণির লোক সমাজে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে। সমাজের অশিক্ষিত লোকদের শোষণ করে। এই পেশাজীবী শ্রেণি গরিব কৃষকদের মামলার ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করতো। সমাজে গরিব, অসহায়, নির্যাতিতদের সংখ্যা প্রচণ্ড হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে । সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখা যায় ।

১০. জমিদার ও কৃষকের মধ্যকার যোগাযোগ অবনতি : জমিদাররা জমির মালিক আর কৃষকেরা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে। জমিদার ও কৃষকের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকা উচিত। কিন্তু নানান কারণে জমিদার ও কৃষকের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক দেখা যায়। 

এছাড়া কোনো কোনো জমিদার শহরে বসবাস করে। এ অবস্থায় জমিদারের পেয়াদারা কৃষকদের বিভিন্নভাবে শোষণ করে থাকে। কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতো, এছাড়া বিভিন্ন কারণে কৃষকদের উপর নির্যাতন করতো ।

১১. উন্নয়ন : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সমাজে উন্নয়ন সাধিত হয় । সমাজে নতুন নতুন রাস্তাঘাট তৈরি ও সংস্কার করা হয় । স্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয়, হাসপাতাল স্থাপিত হয়, সমাজে বিনোদন কেন্দ্ৰ তৈরি হয়। 

প্রজাদের কথা চিন্তা করে জমিদাররা দেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যের উন্নয়নে এগিয়ে আসে। সমাজে কল্যাণমূলক কাজে তাদের অবদান কিছু কিছু লক্ষ্য করা যায় ।

১২. মুসলমানদের আর্থিক সমস্যা : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মুলসমানরা আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন। মুসলমান জমিদাররা তাদের জমিদারি হারায়। এছাড়া রাজস্ব প্রশাসনের উচ্চপদ থেকে মুসলমানরা বঞ্চিত হয় । 

মুসলমান কৃষকরা ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়। সমাজে হিন্দু জমিদারের আধিপত্যে মুসলমানরা নির্যাতিত হয়। মুসলমান কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে ।

১৩. সরকারের রাজস্ব হ্রাস : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সরকারের রাজস্ব হ্রাস পায়। জমিদাররা প্রজাদের নিকট হতে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করে কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারকে খাজনার টাকা দিত না ফলে সরকারের রাজস্ব হ্রাস পায়। 

সরকার রাজস্ব স্থির করে দেওয়ার পর কৃষকরা বেশি উৎপাদন করলে বা বেশি জমি চাষের আওতায় গেলে যে উদ্বৃত্ত খাজনা আদায় করতো তা সরকারকে দিতে হতো না । ফলে সরকার রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হতো।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে একশ্রেণি লোক জমিদারে পরিণত হয় । বাংলার অর্থনৈতিক খাত দুর্বল হয়। বাংলার কৃষকেরা ভূমিহীন হয়ে এবং দিশেহারা হয়ে পড়ে। 

বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক খাত দুর্বল হয়ে পড়ে জমিদার শ্রেণি খাজনা আদায় করতে বাংলার কৃষক শ্রেণির উপর অত্যাচার করতো। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলার শিল্পখ্যাত ধ্বংস হয়। বাংলার শিল্প উন্নয়ন, সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলার উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব গুলি আলোচনা করো 

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলার উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব গুলি আলোচনা করো  । যদি তোমাদের আজকের বাংলার উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব গুলি আলোচনা করো  পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post