১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন। গাইড pdf.

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর

উত্তর : ভূমিকা : বাঙালি বীরের জাতি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। শেখ মুজিবুর ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয় দফা দাবি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ । 

৬ দফা দাবি জনপ্রিয় হবার কারণে পাকিস্তানের সরকার ভীত হয়ে ওঠেন। তারা বাঙালিদের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেন। পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালিরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলেন, যা গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। 

গণঅভ্যুত্থান গণআন্দোলনের রূপ নেয়। এই আন্দোলনে বাঙালির সচেতনতা ও সাহস বৃদ্ধি পায়। শেখ মুজিবরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। আগরতলা মামলার আসামিদের মুক্তি দেওয়া হয়। গণঅভ্যুত্থানের ফলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে ।

→ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল : পাকিস্তানের শোষণের হাত থেকে মুক্তিলাভের জন্য ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের উদ্ভব। গণঅভ্যুত্থানের ফলে সারা দেশের জনগণ আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। বাঙালি জাতি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বহিঃপ্রকাশের নিকটে হাজির হয়। নিম্নে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল আলোচনা করা হলো :

১. আইয়ুবের ভিত কেঁপে উঠে : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুবের ক্ষমতার ভিত কেঁপে উঠে আইয়ুব সরকার ভীত হয়ে সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেয়। 

তবে আইয়ুব সরকার গোপনে ষড়যন্ত্র করে। আইয়ুব ১৯৬৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এক বেতার ভাষণে বলেন শিগগির আলাপ-আলোচনার জন্য দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিবর্গকে আমন্ত্রণ জানাব ।

২. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রত্যাহার : তীব্র আন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ১৯৬৮ সালের শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ আসামির বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল তা গণআন্দোলনের মুখে প্রত্যহার করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব আসামিকে বিনাশর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। 

গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব সরকার মুজিবের আওয়ামী লীগ সরকারের উপর শিতিল মনোভাব প্রদর্শন করেন । তবে পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন।

৩. রাজবন্দিদের মুক্তি দান : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে বাঙালিরা কঠোর আন্দোলনে গড়ে তোলেন। তীব্র আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও সেনাসদস্য নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে। সকলের নিরাপত্তার কথা ভেবে আইয়ুব খান আগরতলা মামলার বন্দিদের মুক্তি দেন ।

৪. দৈনিক ইত্তেফাকের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার : পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা নিষিদ্ধ হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব সরকার বাধ্য হয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন। পত্রিকাটি পুনরায় চালু হয়। পত্রিকাটি পূর্ব পাকিস্তানিদের কথা সর্বসাধারণের নিকট পৌছে দেয়।

৫. বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ : আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন আসামি বন্দি হন। ১৯৬৮ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত শেখ মুজিবুরকে রেসকোর্স ময়দানে এক গণসংবর্ধনায় শেখ মুজিবুরকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়। 

শেখ মুজিবুর সব জনসাধারণের নিকট প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠে। সকলের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। সবাই বঙ্গবন্ধুর আদেশ- নির্দেশ মেনে চলেন। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ যখন স্বাধীনতা ঘোষণা দেন বাঙালি তার ডাকে সাড়া দেন।

৬. গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি গোল টেবিল বৈঠক রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত হয়। 

এই বৈঠকে শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য বিরোধী নেতারা যোগদান করেন। এই বৈঠকে ৬ দফা দাবি সমর্থন পায়নি। ফলে শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতা বৈঠক ত্যাগ করেন। ফলে আন্দোলন আরো কঠোর হয় ।

৭. সিদ্ধান্ত গৃহীত : গোল টেবিল বৈঠক একেবারে ব্যর্থ হয়নি । এই বৈঠকে তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । যথা-

(ক) প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।

(খ) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনপদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। (গ) সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।

৮. আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র থমথম পরিবেশ বিরাজ করে। এই পরিস্থিতিতে শাসনকার্য পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আইয়ুব সরকার শঙ্কিত হয়ে পড়ে।

৯. আইয়ুব সরকারের পদত্যাগ : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের পরিস্থিতি খারাপ হয়। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আইয়ুব খান সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ন্যস্ত করে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করেন। আইয়ুব খানের পদত্যাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয় ।

১০. ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ফল হলো ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় লাভ। আওয়ামী লীগ ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পায়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে তোলেন।

১১. অসহযোগ আন্দোলনের ভিত্তি সুদৃঢ় : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ফলাফল হলো অসহযোগ আন্দোলনের ভিত্তি সুদৃঢ়। অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বাঙালিরা অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন ।

১২. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালিরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করে। বাংলাদেশ অর্জন করে স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পাক সেনাদের প্রতিহত করেন। পাকসেনাদের পরাজিত করে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন পতাকা উদিত হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে বাঙালিরা ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে । বাঙালিরা নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেতন হয়। আগরতলা মামলার আসামিদের মুক্তি দেওয়া হয়। 

পাকিস্তানের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ একত্রিত হয় । শেখ মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়। পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীন বাংলার জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। 

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান গণআন্দোলনের রূপ ধারণ করে। বাঙালির আন্দোলনের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ বাঁধে। এই যুদ্ধে পুর্ব পাকিস্তান বিজয় লাভ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর । যদি তোমাদের আজকের ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ব্যাখ্যা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post