১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ । পিকচার

১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ
১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ

১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ

উত্তর : ভূমিকা বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালিরা বুকে তাজা রক্ত ঢেলে দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ছয় দফা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। ছয় দফা আন্দোলনকে বাঙালির মুক্তি সনদ বলা হয়। 

ছয় দফা বাঙালিদের সাহসী করে তোলে। স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করে। অধিকার ও শোষিত, বঞ্চিত বাঙালিরা ছয় দফার মাধ্যমে নতুন করে নিজেদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন ঠিকানা খুঁজে পায়। 

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধীনতা অর্জনে ছয় দফা প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিলেন। ছয় দফার মাধ্যমে বাঙালি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে সাহস পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। এই স্বাধীনতার জন্য ছয় দফা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

→ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছয় দফার গুরুত্ব : ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। বাঙালি জাতিকে পাকিস্তান শাসকের নির্যাতন থেকে মুক্তি ও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। নিম্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছয় দফার গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো :

১. প্রতিবাদে সাহস যোগায় : ছয় দফা আন্দোলন ছিল বাঙালিদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস যোগায়। ছয় দফা ছিল বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের মুক্তির আন্দোলন। 

বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বলে। ছয় দফা আন্দোলন ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালির প্রতিবাদ করার উৎসাহ জোগায় ।

২. সম্প্রীতি প্রকাশ : ছয় দফা আন্দোলন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান জাতিকে পারস্পরিক সম্প্রীতিতে সম্পৃক্ত করে। সব জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। ছয় দফা ছিল সব দাবি। 

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিরা ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনে নামে। ছয় দফার মাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি গড়ে ওঠে ।

৩. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা : ছয় দফা দাবি জনগণের নিকট জনপ্রিয়তা লাভ করলে পাকিস্তান সরকার শঙ্কিত হয়ে পড়ে। ছয় দফা দাবি বঙ্গবন্ধু উত্থাপন করেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগণ ষড়যন্ত্র মামলা করেন। 

যার নাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য আসামিদের বন্দি করেন। ছয় দফা প্রেক্ষিতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয়েছিল ।

৪. প্রত্যক্ষ আক্রমণ' : পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ আক্রমণ ছিল ছয় দফা দাবি, বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা দাবি পেশ করেন তখন পাকিস্তানি শাসকগণ ভীত হন। 

পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রত্যক্ষ আক্রমণ হলো ছয় দফা আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সাহস যোগায় ।

৫. দমননীতি প্রয়োগ : ছয় দফা দাবির পক্ষে জনতার সমর্থন দিন দিন বৃদ্ধি পায়। এই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠী ছয় দফা প্রদানকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দমননীতি প্রয়োগ করেন। 

সরকারি বাহিনী নেতাদের মিথ্যা মামলায় আটক করেন। এই আটকের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী কঠোর প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা হয় । ৭ জুন আওয়ামী লীগ হরতালের ডাক দেন। এই হরতালে জনতার সমর্থনে পাকিস্তানি শাসনগোষ্ঠী ভীত হয়। 

হরতাল প্রতিরোধে ১৪৪ ধারা জারি করে । জনতা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে হরতাল করে। পুলিশ হরতালে গুলি বর্ষণ করে। অনেকেই এই হরতালে মারা যায় ।

৬. স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা : ছয় দফা দাবির মাধ্যমে বাঙালিরা স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করেন। বাঙালিদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান ও দমন করার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করেন। 

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলেন । বাঙালিরা আলাদা রাষ্ট্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ হন।

৭. বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ : পাকিস্তান সৃষ্টির পর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে শোষণ করেন। বিভিন্ন দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বৈষম্যের শিকার হন। 

শিক্ষার দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানিদের বৈষম্য করা হয়। এছাড়া অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানিরা বৈষম্যের শিকার হন।

৮. সচেতনতা বৃদ্ধি : ছয় দফা দাবি পূর্ব পাকিস্তানিদের সচেতন করে তোলে। এর মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়। অধিকার আদায়ের বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হন। বাঙালিরা দলবদ্ধ হয়ে নিজের অধিকার আদায়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। বাঙালিরা এই সচেতনতার পিছনে ছয় দফা দাবি ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।

৯. বুকের তাজা রক্তের বদলা : ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য সালাম, বরকত, রফিক বুকের তাজা রক্ত দেন। এই রক্তের বদলা নেওয়ার জন্য বাঙালিরা ১৯৬৫ সালে শেখ মুজিবুরকে ছয় দফা দাবির প্রতি সমর্থন দেন। ছয় দফা দাবির পক্ষে বাঙালিরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলেন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ।

১০. বাঙালিদের বাঁচার দাবি : ছয় দফা দাবির অন্যতম তাৎপর্য হলো বাঙালিদের বাঁচার অধিকার । এই দাবি বাঙালিদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন জোগায়। পরাধীনতার শেকল থেকে বের হয়ে বাঘের মতো বাঁচার শিক্ষা দেয় ছয় দফা দাবি। বাঙালিরা স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের অধিবাসী হয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন ।

১১. স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি : ছয় দফা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে ভিত্তি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পথে এক ধাপ এগিয়ে যান। 

মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ অঙ্কুরিত হয় ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবির উত্থাপনের মাধ্যমে। ছয় দফা দাবিকে বাঙালি মুক্তির সনদ বলা হয়। ছয় দফা দাবির মাধ্যমে বাঙালিরা নিজেদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হন।

১২. শেখ মুজিবুরের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা : ছয় দফা দাবির উত্থাপনের মাধ্যমে শেখ মুজিবুরের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। শেখ একক নেতা হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিকট জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। 

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ শেখ মুজিবুরকে নেতা হিসেবে মেনে নেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে শেখ মুজিবুরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। শেখ মুজিব বাংলার স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন ।

১৩. স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় : ছয় দফা দাবির মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিরা স্বাধীনতা লাভ করেন। বাঙালি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। ছয় দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ফলাফল হলো স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ছয় দফা দাবি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের জনসমর্থন আদায়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। জনগণ ছয় দফার পক্ষে সাড়া দেন। 

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলেন। বাঙালির আন্দোলনে ভীত হয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রের জাল বপন করেন। 

যার ফলে আন্দোলন আরো তীব্র হয়। ১৯৭১ সালে নয় মাস সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় । স্বাধীনতা সংগ্রামে ছয় দফার গুরুত্ব অনেক।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ । যদি তোমাদের আজকের ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post