শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ১০টি উপায় জেনে নিন (কাজে লাগবে)
শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ১০টি উপায় | শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ৫টি উপায় - শব্দ দূষণ আমাদের আধুনিক বিশ্বের একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে উঠেছে। যা আমাদের স্বাস্থ্য, সুস্থতা এবং পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। অত্যাধিক শব্দ দূষণে আমাদের ঘুম ব্যাহত হতে পারে, মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি বন্য প্রাণীর ক্ষতিও করতে পারে।
শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ১০টি উপায় | শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ৫টি উপায় |
তাই, আমাদের শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করা একটি অপরিহার্য বিষয়। শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করার ফলে, এটি ব্যক্তি এবং একটি সম্প্রদায়ের মাঝে শান্তি বজায় রাখবে এবং সেই সাথে এটি পরিবেশ রক্ষার জন্য ও অপরিহার্য। শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে।
আমরা যদি শব্দ দূষণ প্রতিরোধের উপায় গুলো নিজেদের এবং আশেপাশের মানুষদের মাঝে প্রয়োগ করি, তাহলে আমাদের শব্দ দূষণ অনেকাংশই প্রতিরোধ হতে পারে।
শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ১০টি উপায় | শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ৫টি উপায়
তাই আজকের এই আর্টিকেলে বেশ কিছু শব্দ দূষণ প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি, যেগুলো শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করতে এবং প্রত্যেকের জন্য স্বাস্থ্যকর, শান্ত পরিবেশ তৈরি করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। চলুন তবে, শব্দ দূষণ প্রতিরোধের এসব উপায় গুলো দেখে নেওয়া যাক।
১. নগর পরিকল্পনা এবং জোনিং এর মাধ্যমে শব্দ দূষণ প্রতিরোধের উপায়
শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য সুপরিকল্পিত নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন একটি এলাকার মানুষ তখনই বেশি শব্দ দূষণ উপলব্ধি করতে পারে, যখন সেই এলাকায় বেশি পরিমাণে কল কারখানা কিংবা যানবাহন থাকে।
এক্ষেত্রে যদি সে সব কলকারখানা কিংবা যানবাহনগুলো সেই স্থান থেকে অন্য কোথাও নেওয়া যায়, তাহলে খুব সহজেই শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
আর তাই কৌশলগতভাবে আবাসিক অঞ্চলে থেকে শিল্প কারখানা, পরিবহন, এবং বিনোদনের স্থানগুলোকে দূরে রাখতে হবে, যাতে করে সেই এলাকার বাসিন্দাদের ওপর শব্দ দূষণের প্রভাব কম পড়ে।
শব্দ দূষণ প্রতিরোধের প্রথম উপায় হিসেবে প্রথমেই সরকারি কর্তাদের সঠিকভাবে নগর পরিকল্পনা এবং জোনিং করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি একটি দেশের এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়, তাহলে এটি শব্দ দূষণ প্রতিরোধে অনেক সাহায্য করবে।
২. শব্দ দূষণ প্রতিরোধে বেশি বেশি গাছ লাগান
গাছ শুধুমাত্র আমাদের অক্সিজেন এবং পরিবেশের জন্যই উপকারী নয়, বরং এটি আমাদের নিত্য দিনের সমস্যা শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য ও কাজ করে।
যেসব এলাকায় শব্দ দূষণের পরিমাণ বেশি, সেখানে যদি অধিক পরিমাণে গাছ থাকে, তাহলে এটি সাউন্ড প্রুভিং হিসেবে ও কাজ করে। তাই, নগর বা শহর, যেকোনো জায়গায় পরিবেশ এবং শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য বেশি বেশি গাছ লাগান।
এছাড়া ও, বাড়ি নির্মাণের সময় সাউন্ড প্রুভিং উপকরণ ব্যবহার করা ভবন এবং কক্ষের মধ্যে শব্দ দূষণ উল্লেখযোগ্য কম হয়।
৩. সাউন্ড প্রবলেম এবং ইন্সুলেশন ব্যবহার করে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করার উপায়
ভবন কিংবা নিজের বাড়ি নির্মাণের সময় যদি নির্মাণ এবং স্থাপত্যে সাউন্ড প্রুভিং উপকরণ ও কৌশল ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটি শব্দ দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।
বাড়ি নির্মাণের সময় শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য ডাবল গ্লাস জানালা, অ্যাকোস্টিক প্যানেল এবং আরো শব্দ নিরোধক উপকরণ কক্ষ এবং ভবনের মধ্যে শব্দ দূষণ উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করতে পারে।
তাই, আপনি যদি চারপাশের শব্দ দূষণ প্রতিরোধের উপায় খুঁজে থাকেন, তাহলে এখন থেকেই চারপাশের মানুষদের বাড়ি নির্মাণের সময় কিংবা নিজের বাড়ি বানানোর সময় ও সাউন্ড প্রুভিং উপকরণ ব্যবহার করুন। এতে করে, আপনি আপনার বাড়িতে উল্লেখযোগ্য ভাবে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করতে পারবেন।
৪. শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করুন
যেসব জায়গায় অত্যাধিক পরিমাণে শব্দ দূষণ হয়, সেখানে যদি শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে শব্দ দূষণ সেখান থেকেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ, শিল্প কারখানা, নির্মাণ শিল্প, বিনোদন স্পট ইত্যাদি জায়গা গুলোতে শব্দ দূষণ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। আর এসব জায়গাগুলোতে যদি শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে এমনিতেই শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করা যাবে।
তাই, প্রশাসনের উচিত হবে গ্রহণযোগ্য শব্দের মাত্রার চাইতে বেশি পরিমাণে শব্দ দূষণ করলে জরিমানা নির্ধারণ করা।
এতে করে, শব্দ দূষণের পরিমাণ অনেক কমে যাবে বলে আশা করা যায়। আমি মনে করি যে, শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করার উপায় গুলোর মধ্যে থেকে এটি হল সর্বোত্তম একটি ব্যবস্থা, যা প্রয়োগ করার মাধ্যমে শব্দ দূষণ সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৫. জনসচেতনতা এবং শিক্ষার মাধ্যমে শব্দ দূষণ প্রতিরোধের উপায়
জনসাধারণকে বিভিন্ন প্রচার এবং শিক্ষামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাদের মাঝে এরকম মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে যে, যাতে করে তারা শব্দ দূষণে প্রতিরোধে নিজেরাই উদ্বেগী হয়ে ওঠে।
শব্দ দূষণ কিভাবে আমাদের সমাজের মানুষের এবং পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষতি করতে পারে, সেটি বলে যদি মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে এতে করে ভবিষ্যতে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করা যাবে।
তাই, কোন একটি সমাজের শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন উপায় এর মধ্যে শব্দ দূষণের এই উপায়টি ও বেশ কার্যকর হতে পারে।
৬. শব্দ দূষণমুক্ত যানবাহন ব্যবহারের মাধ্যমে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করার উপায়
কোন নির্দিষ্ট একটি এলাকা বা শহরের শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য শব্দ বিহীন যানবাহন ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ, সেই বিশেষ সংরক্ষিত এলাকায় শুধুমাত্র শব্দ বিহীন যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে।
যদি এরকম কোন একটি সংরক্ষিত এলাকা বানানো হয়, যেখানে শুধুমাত্র ইলেকট্রিক এবং বাইসাইকেল এর মতো যানবাহনগুলো প্রবেশ করতে পারবে, তাহলে সেই শহরের শব্দ দূষণের মাত্রা অনেক কমি যাবে।
তাই, শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং যেসব যানবাহন অতিরিক্ত শব্দ দূষণের জন্য দায়ী, সেগুলোর ব্যাপারে ভাবতে হবে।
৭. একটি নীরব অঞ্চল বানানোর মাধ্যমে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ
আপনি যদি শব্দ দূষণের জন্য একেবারে বিরক্ত হয়ে যান, তাহলে আপনার জন্য একটি নীরব অঞ্চল বাছাই করতে হবে। আপনি এমন একটি শান্ত এলাকা বা কোলাহল মুক্ত অঞ্চল নিজের জন্য মনোনীত করতে পারেন। এসব জায়গাগুলো আপনাকে শব্দ দূষণের হাত থেকে সাময়িক সমাধান দিতে পারে।
তবে দীর্ঘমেয়াদি শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য আপনি এসব এলাকায় নিজের বাড়ি বানাতে পারেন। যেটি, আপনার জন্য শব্দ দূষণ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হতে পারে।
৮. টেকসই এবং শব্দ-বিহীন যানবাহনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে শব্দ দূষণ প্রতিরোধের উপায়
শব্দ দূষণ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হল টেকসই এবং শব্দ-বিহীন যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া। এক্ষেত্রে, বৈদ্যুতিক গাড়ি, সাইকেল এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করা যায়।
বৈদ্যুতিক গাড়ি, সাইকেল এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট শুধুমাত্র শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্যই কাজ করে না, বরং এটি বায়ু দূষণ কমানোর জন্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং সাইকেল থেকে কোন শব্দ দূষণ হয় না। তাই, শব্দ দূষণ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং সাইকেল এর মতো যানবাহন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯. সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শব্দ দূষণ প্রতিরোধের উপায়
শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য সরকারি সংস্থা, বলার জনক সংস্থা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে দূষণ মোকাবেলায় সহযোগিতা করতে হবে। এক্ষেত্রে সকলের দক্ষতা এবং রিসোর্স একত্রিত করার মাধ্যমে একটি কার্যকর শব্দ দূষণ প্রতিরোধের কৌশল নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।
শব্দ দূষণ যেহেতু আমাদের এবং চারপাশের পরিবেশের জন্য একটি বড় ধরনের সমস্যা, তাই এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরস্পরের সহযোগিতা এবং অংশীদারদের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
১০. ব্যক্তিগত দায়িত্বের মাধ্যমে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করার উপায়
দিন শেষে আপনিও শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মে শব্দের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন থেকে কাজ চালিয়ে যান। যেমন: উচ্চস্বরে গান বাজানোর পরিবর্তে কানে হেডফোন ব্যবহার করা, অপ্রয়োজনে যন্ত্রপাতি বন্ধ করা, প্রতিবেশীর প্রতি যত্নবান হওয়া ইত্যাদি কাজকর্মের মাধ্যমে আপনিও শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করতে পারেন।
শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য আপনাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে। সেই সাথে, নিজের দায়িত্ব হিসেবে অন্যকে ও শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সচেতন করতে হবে। আমরা যে কারণে শব্দ দূষণ করছি, সেটি অবশ্যই অন্য কারো জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
আর্টিকেলের শেষকথা: শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ১০টি উপায় | শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ৫টি উপায়
যদি নগর পরিকল্পনা, অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত অভ্যাসগুলোর পরিবর্তন করা হয়, তাহলে অনেকাংশেই শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করা যায়।
আজকের এই আর্টিকেলে আমি এরকমই শব্দ দূষণ প্রতিরোধের ১০ টি উপায় নিয়ে আলোচনা করলাম। আপনি যদি আপনার নিজের জন্য অথবা চারপাশের পরিবেশে শব্দ দূষণ প্রতিরোধের এসব উপায় গুলো প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে আপনিও শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।
তাহলে, আজ থেকে আপনিও শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য নিজ দায়িত্বে কাজ করুন। যাতে করে, আপনার দ্বারা কোন ধরনের শব্দ দূষণ না হয়। ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম।