বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসবের বর্ণনা দাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসবের বর্ণনা দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসবের বর্ণনা দাও ।
বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসবের বর্ণনা দাও |
বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসবের বর্ণনা দাও
বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মীয় আচার-আচরণ অনুষ্ঠানের বর্ণনা দাও
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের মানুষ ধর্মভীরু। ধর্মকে কেন্দ্র করে জীবনযাপন করেন।। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের লোক মিলেমিশে বসবাস করে। বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ একটি শ্লোগান সর্বত্রই প্রচারিত ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান । মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ।
বাংলাদেশের ধর্মীয় উৎসবে সর্ব ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করে । হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবে মুসলমান অংশগ্রহণ করে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সব ধর্মের লোক পাশাপাশি বসবাস করে ।
→ বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্ম : ধর্মের মূল কথা হলো মানুষ হিসেবে মানুষের সেবা করা। জীবনকে যা ধারণ করে তাই ধর্ম। ধর্ম একটি জীবন দৃষ্টি এবং জীবন ব্যবস্থা যা মানুষকে তার প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে সর্বোত্তম প্রগতি ও উন্নতি বিধানের পথ নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম অনুসরণ করে । নিম্নে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের বর্ণনা দেওয়া হলো :
১. ইসলাম ধর্ম : শান্তির ধর্ম হলো ইসলাম। আল্লাহ তাআলা এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করা ও তার বিধি নিষেধ মেনে চলা এবং মহানবি (সা.)-এর দেখানো পথে চলার নামই ইসলাম । যারা ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে তাদের মুসলমান বলা হয়।
মু ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। যথা- কালেমা, নামাজ, রোজা, পে হজ, যাকাত। একজন প্রকৃত মুসলিমকে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ | ঈদ পালন করতে হয়। একজন মুসলমানকে কালেমা বলা ও তার শাি উপর পূর্ণ বিশ্বাস করতে হয়। নামাজ জান্নাতের চাবি। এক মাত্র ধরা নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়।
মুসলমানদের ঈদ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হয়। রমজান মাসে মুসলমানদের একমাস রোজা রাখতে হয়। যারা ধনী ও হজ করার সামর্থ্য আছে তাদের মক্কা ও মদিনায় গিয়ে হজ পালন করতে হয়। ধনীরা তাদের আয়ের একটি অংশ গরিবদের যাকাত দিবেন।
২. হিন্দুধর্ম : বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্ম অনুসারীর লোক হলো হিন্দুধর্ম। হিন্দুধর্মকে সনাতন ধর্মও বলা হয়। শ্রীকৃষ্ণকে হিন্দু ধর্মের প্রবর্তক বলা হয়। হিন্দুরা সৃষ্টিকর্তাকে ভগবান বলে ডাকে। হিন্দুরা বহুদেবতার অনুসারী। যেমন — ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু, গণেশ। হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ।
তাদের উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় গ্রন্থ হলো রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, ভগবত ইত্যাদি। হিন্দুরা বিশ্বাস করে তাদের সৃষ্টি করেছেন ব্রহ্মা। হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনালয় মন্দির। হিন্দুরা মন্দিরে যায় ধর্ম পালনের জন্য। এছাড়া হিন্দুরা বাড়িতে ছোট মন্দির তৈরি করে পুঁজা করেন।
৩. খ্রিস্টধর্ম : বর্তমান বিশ্বের বৃহৎ ধর্ম হলো খ্রিস্টধর্ম। খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় নেতা হলো যিশু। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। যিশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হয় । খ্রিস্টানরা হলো হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারী। খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থের নাম বাইবেল।
খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উপাসনালয়ের নাম গির্জা। গির্জার প্রধানকে তারা ফাদার নামে সম্বোধন করে। খ্রিস্টানরা ইস্টার সানডে, ইন্টার স্যাটারডে ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব পালন করে ।
৪. বৌদ্ধধর্ম : বাংলাদেশের অন্যতম ধর্ম হলো বৌদ্ধধর্ম। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ । বৌদ্ধধর্মের প্রধান বিষয় অহিংসা পরম ধর্ম। বৌদ্ধধর্মে ঈশ্বরের ধারণা অনুপস্থিত।
বৌদ্ধধর্মের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা। গৌতম বুদ্ধ নেপালের নুম্বিনীতে জন্মগ্রহণ করেন। বৌদ্ধরা আষাঢ়ে পূর্ণিমা, আশ্বিনী পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, চৈত্রসংক্রান্তি ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব পালন করেন ।
→ বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব বা আচার-অনুষ্ঠান : বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের লোক পাশাপাশি বসবাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে পালন করে আসছে। ধর্মীয় উৎসব পালনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি আজ বিশ্বে স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে পরিচিত। নিম্নে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব বা আচার-অনুষ্ঠানের বর্ণনা দেওয়া হলো :
১. ঈদুল ফিতর : মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। ঈদ মানে খুশি। মুসলমানরা বছরে দুটি ঈদ পালন করে । যথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর মুসলমানরা ঈদুল ফিতর পালন করে।
রোজার সময় থেকে মুসলমানরা ঈদুল ফিতর পালনের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করে। পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করেন । ঈদগাহ যাবার আগে মুসলমানরা গরিব লোকদের মাঝে ফিতরা, শাড়ি, পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি দেয়।
ঈদের দিনে গৃহকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করেন। পুরুষরা নতুন পোশাক পড়ে ঈদগাহে নামাজ আদায় ও পরস্পরের সাথে কুশল বিনিময় করেন। ঈদের দিনে পরিবারের সকলে একসাথে ঘুরতে বের হন । এইদিনে গরিব-ধনীর কোনো ভেদাভেদ থাকে না ।
২. ঈদুল আযহা : মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহার দিনে মুসলমানরা কুরবানি করেন। হযরত ইবরাহিম (আ.) কে আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বস্তুকে কুরবানি করার আদেশ দেন।
হযরত ইবরাহিম (আ.) পশু কুরবানি দেন, তারপরও আল্লাহ স্বপ্নে তাকে আবার প্রিয় বস্তুকে কুরবানি দেওয়ার কথা বলেন। হযরত ইবরাহিম ভেবেচিন্তে দেখেন তার প্রিয়বস্তু তার পুত্র ইসমাইল।
আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে হযরত ইবরাহিম ইসমাইলকে কুরবানি দেওয়ার জন্য মাটিতে শোয়ালেন। ইবরাহিম চোখ বেঁধে ইসমাইলকে কুরবানি করতে গেলেন, আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে ইসমাইলের স্থলে একটি দুম্বা রেখে দিলেন।
ইবরাহিম দুম্বাকে কুরবানি দিলেন। সেই থেকে মুসলমানরা ঈদুল আযহা পশু কুরবানি দেন। কুরবানির পশুর মাংস তিন ভাগ করে একভাগ গরিব লোকদের মধ্যে বিলিয়ে দেন, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ও অন্য এক ভাগ নিজেদের জন্য রেখে দেন। এই দিনে ধনী-গরিব সবাই মাংস ভক্ষণ করেন ।
৩. শবে মিরাজ : মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হলো শবে মিরাজ । এই রাতে মহানবি (সা.) বোরাকে চড়ে আল্লাহর সাথে দেখা করতে যান। আল্লাহ মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে আদেশ দেন। সেই থেকে মুসলমানরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। এই রাতে মুসলমানরা নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য প্রস্তুত থাকেন ।
৪. শবে বরাত : শবে বরাতকে ভাগ্যরজনী বলা হয়। আরবি সাবান মাসের ১৪ তারিখে শবে বরাত পালিত হয়। এই রাতে মানুষের ভাগ্য রচনা করা হয়। মুসলমানরা এই রাতে ইবাদত- বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করে। এই রাতে মুসলমানরা বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করেন। মসজিদের মুসল্লিদের মধ্যে তাবারক দেওয়া হয়। মুসলমান নর-নারীরা সারারাত নামাজ, কুরআন শরীফ তেলাওয়াত, জিকির করেন । এই রাতের ফজিলত অনেক ।
৫. ঈদে মিলাদুন্নবী : মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদে মিলাদুন্নবী। মিলাদুন্নবী অর্থ নবীর জন্মদিন। ৫৭০ খ্রিঃ ১২ রবিউল আউয়াল মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। মহানবি (সা.) জন্মদিন ঘিরে মুসলমানরা রোজা, নামাজ ও মিলাত মাহফিলের আয়োজন করেন। ধনীরা গরিবদের খাবারের ব্যবস্থা করেন।
৬. মহররম : মহররমকে পবিত্র আশুরাও বলা হয়। মহররম মাসের ১০ তারিখে মহানবি (সা.) আদরের নাতি হযরত ইমাম হুসাইন কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদের হাতে শাহাদাৎ বরণ করেন। ইসলাম ধর্মকে প্রতিষ্ঠা, সত্য-ন্যায়ের জন্য ইমাম হুসাইন যুদ্ধ করেছেন। ইমাম হুসাইনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য মুসলমানরা ১০ মহররম ইবাদত বন্দেগি ও মিলাদের আয়োজন করেন ।
৭. দুর্গাপূজা : হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা । আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ তিথির সন্ধ্যায় পুরোহিত দুর্গাপূজার প্রাথমিক কাজ শুরু করেন। তারপর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে দেবীর পূজা অর্চনা করেন। দশম তিথিতে দেবীকে বিসর্জন দেন।
দুর্গাপূজায় হিন্দুরা আনন্দ করে। পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে দেবী দর্শন ও পূজা করে। দুর্গাপূজায় হিন্দুরা বিভিন্ন জায়গায় পূজা দর্শন করে ।
৮. জন্মাষ্টমী : ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত। শ্রীকৃষ্ণ ভাদ্র মাসের অষ্টমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনে হিন্দুরা উপবাস থাকে, জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা বের করেন। শ্রীকৃষ্ণের পূজা ও লীলাকীর্তন, গীতাযজ্ঞ, আলোচনাসভা করেন। এই দিন হিন্দুরা উৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করেন।
৯. বড়দিন : খ্রিস্টানদের সবচেয়ে ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। বড়দিন খ্রিস্টানদের কাছে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসেন। এই দিনে যিশুখ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে বড়দিন পালিত হয়। এই দিনে উপহার সামগ্রী আত্মীয়দের মধ্যে দেওয়া হয়। বড়দিনের অন্যতম আকর্ষণ হলো সান্তাক্লোজ, ক্রিসমাস ট্রি।
১০. বৌদ্ধ পূর্ণিমা : বৌদ্ধদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো বৌদ্ধ পূর্ণিমা। বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক ভগবান গৌতম বুদ্ধ। গৌতম বুদ্ধ ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের জৈষ্ঠ্য মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং একই তিথিতে মারা যান।
এই দিনে বৌদ্ধরা, পূজা করে। বৌদ্ধ ধর্মের মূলকথা হলো অহিংসা পরম ধর্ম। বৌদ্ধরা বিভিন্ন উৎসব পালন করেন। যেমন- আষাঢ়ে পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, চৈত্রসংক্রান্তি ইত্যাদি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ সব ধর্মের লোকদের বসবাসের অভয়ারণ্য। প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের রয়েছে স্বতন্ত্র ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানের সাথে পালন করে থাকে। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসবের বর্ণনা দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসবের বর্ণনা দাও । যদি তোমাদের আজকের বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ধর্ম ও ধর্মীয় উৎসবের বর্ণনা দাও পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।